কিডনি ডিজিজঃকিডনি রোগের লক্ষন, প্রতিরোধ ও প্রতিকার ।। Chronic kidney disease:www.valodactar.com
Kidney diseases |
কিডনি ডিজিজঃকিডনি রোগের লক্ষন, প্রতিরোধ ও প্রতিকার ।। Chronic kidney disease:www.valodactar.com
কিডনি কি?
কিডনি হলো মানবদেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনি হচ্ছে মানুষের পাঁজরের খাঁচার নীচে বুক বরাবর পিঠ ও কোমরের মাঝখানে অবস্থিত সিমের বীজের আকারের এক জোড়া অঙ্গ। মেরুদন্ডের প্রতিটি পাশে একটি করে কিডনি রয়েছে। প্রাপ্ত বয়সে একটা কিডনি সাধারণত ১১-১৩ সিমি. লম্বা এবং ৫-৬ সেমি. চওড়া হয় একটা কিডনির ওজন প্রায় ১৫০ গ্রাম।
কিডনির কাজ কিঃ
কিডনি রক্তে উপস্থিত দূষিত পদার্থগুলো পরিশোধন করে এবং মূত্র তৈরি করে সেগুলো দেহ থেকে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। কিডনি আমাদের শরীরের অতি-গুরুত্বপূর্ণ ছাঁকন অঙ্গ।এটি মুলত শরীরে ছাঁকনি হিসেবে কাজ করে। রক্তের সাথে মিশে থাকা বর্জ্য, অতিরিক্ত পানি এবং অনন্য অপ্রয়োজনীয় দূষিত পদার্থ ছেঁকে রক্তকে পরিশোধিত করে।
কিডনির রোগঃ
পৃথিবীতে যত প্রাণঘাতী রোগ গুলো রয়েছে এর মধ্যে কিডনি রোগ একটি। এটি খুব ধীরে মানবদেহের ক্ষতি সাধন করে, এই কারনে একে নীরব ঘাতকও বলা হয়। খুব জটিল অবস্থা না হলে সাধারণত এর লক্ষণ গুলো ভালোভাবে প্রকাশ পায়না। বিভিন্ন কারণে কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে বা একটি অসুস্থ বা অকার্যকর কিডনির কারণে একজন মানুষ দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। এমনকি কিডনি একেবারে অকার্যকর হয়ে গেলে মৃত্যু নিশ্চিত।
কিডনি রোগের প্রকারভেদঃ কিডনি রোগ মুলত দুই প্রকার যেমন-১) একিউট কিডনি ডিজিজ, ২)পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ, ৩) ক্রনিক কিডনি ডিজিজ
১) একিউট কিডনি ডিজিজঃ
একিউট কিডনি ডিজিজের মধ্যে ইউরিনারিট্রাক্ট ইনফেকশন, পায়েলোনেফ্রাইটিস, গ্লোমারুলোনফ্রাইটিস ইত্যাদি ।
ইউরিনারিট্রাক্ট ইনফেকশনঃ
মুত্রনালির উন্মুক্ত ছিদ্র, অন্ত্র থেকে আগত অণুজীব যা মূত্রনালির মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়। অণুজীব হিসেবে সাধারণত এশেরিকিয়া কোলাই (৭০-৮০%) ও এন্টেরোকক্কাস ফিকালিস থাকে। এদের পাশাপাশি অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া যেমনঃ সিউডোমোনাস এরুজিনোসা ও বিভিন্ন প্রজাতির ক্লেবসিয়েলার কারণে হাসপাতাল থেকে লব্ধ সংক্রমণ (Hospital-acquired infections) ঘটতে পারে। অধিকাংশক্ষেত্রে পায়েলোনেফ্রাইটিস মূত্রনালির নিম্নাংশের সংক্রমণ, বিশেষ করে সিস্টাইটিস ও প্রোস্টেটাইটিস, হিসেবে শুরু হয়। ই . কোলাই মূত্রথলির পৃষ্ঠস্থ ছাতাকৃতির কোষে (Superficial umbrella cells of bladder) আক্রমণ করে।
লক্ষন সমুহের মধ্যে যেমন- এক-দুই দিনের মধ্যে প্রকাশ পাওয়া শীত-শীত ভাবের মাঝারী থেকে তীব্র জ্বর ও প্রস্রাব করার সময় জালা পোড়া ও ব্যথা হতে পারে, সাথে পেটব্যাথাও থাকতে পারে যা কোমড়ের পাশ দিয়ে পিঠের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে এসবের সাথে বমিও হতে পারে।
পায়েলোনেফ্রাইটিসঃ
এ খেত্রেও অধিকাংশক্ষেত্রে মূত্রনালির নিম্নাংশের সংক্রমণ, বিশেষ করে সিস্টাইটিস ও প্রোস্টেটাইটিস হিসেবে শুরু হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্তপ্রবাহের মাধ্যমেও সংক্রমণ ঘটতে পারে। ই . কোলাই জীবনু মূত্রথলির পৃষ্ঠস্থ ছাতাকৃতির কোষে বার বার আক্রমণ করে। অন্তঃকোষীয় ব্যাকটেরিয়ার সম্প্রদায় যারা জীবানু প্রতিরোধী এবং এই প্রতিরোধ্যতা পায়েলোনেফ্রাইটিসসহ মূত্রনালির অন্যান্য সংক্রমণ পুনঃসংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায় ।
লক্ষন সমুহের মধ্যে যেমন- প্রায়শঃ কিছু দিনের মধ্যে প্রকাশ পাওয়া শীত-শীত ভাবের তীব্র জ্বর ও প্রস্রাব করার সময় জালা পোড়া না থাকলেও ব্যথা হতে পারে, সাথে পেটব্যাথা থাকতে পারে যা কোমড়ের পাশ দিয়ে পিঠের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এসবের সাথে খাবারে অরুচি,বমিও হতে পারে।
কিডনি রোগের ঝুঁকির কারনঃ
যে সকল ব্যক্তির মধ্যে কিডনি রোগের লক্ষন গুলি কম-বেশী আছে, যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, যাদের ডায়াবেটিস আছে, যারা অতিরিক্ত পরিমাণ ব্যাথানাশক ঔষুদ সেবণ করেন, ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানাজনিত পানিশূন্যতা, বারবার গলার,চামড়ায়, প্রস্রবের সংক্রমণ হয় এবং পরিবারে বংশগত কিডনি রোগের ইতিহাস আছে, এ সকল ব্যক্তির মধ্যে কিডনি রোগের ঝুঁকির কারন আছে।
কিডনি রোগ নির্ণয়ঃ
কিডনি রোগের লক্ষন দেখা দিলে প্রথমে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ কিডনি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কিডনি রোগের কিছু পরীক্ষা আছে যার মাধ্যমে সহজেই কিডনির রোগ নির্ণয় করা সম্ভব যেমন-
সিরাম ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষাঃ
এটি অতি সহজ একটি নিদিষ্ট কিডনি ফাংশন টেষ্ট। এর স্বাভাবিক মান পুরুষদের ক্ষেত্রে ০.৬ থেকে ১.৪ mg/dL, এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ০.৫ থেকে ১.২ mg/dL । কিডনি ঠিকমত কাজ না করলে এর মাত্রা বেড়ে যায়।
Creatinine test |
প্রস্রাব পরীক্ষাঃ
প্রস্রবের সাথে পুঁজ, প্রটিন, টি.বি জিবানু এবং রক্তকনিকা আছে কিনা এটি নির্ণয় করতে এই পরীক্ষা করা হয়।
মাইক্রোঅ্যালবুমিন টেস্টঃ
ডায়াবেটিসের কারনে কিডনি খারাপ হওয়া সম্ভবনা আছে কিনা এই পরীক্ষার মধ্যমে অতি দ্রুত নির্ণয় করা যায়।
আলট্রাসনোগ্রাফঃ
এটি কিডনি এবং মূত্রনালীর স্পষ্ট চিত্র তৈরি করে,। কিডনিগুলো খুব ছোট বা বড় কিনা ডাক্তাররা এর মাধ্যমে বুজতে পারেন। এছাড়া সি.টি স্ক্যান,কিডনি বায়োপসি ইত্যাদি পরিক্ষার মাধ্যমে কিডনি রোগ সনাক্ত করা হয়।
কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
কিডনি রোগের প্রতিরোধ,প্রতিকার ও কিডনি রোগ থেকে মুক্তির উপায়ঃ
যাদের উচ্চরক্তচাপ আছে এবং ডায়াবেটিস আছে এই রোগ গুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা।
প্রস্রাবে পরিবর্তন, প্রস্রাব কম বেশি হলে, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া,প্রস্রবের সাথে রক্ত বা পুঁজ গেলে সাথে সাথে কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া।
অতিরিক্ত ব্যাথানাশক এবং এন্টিবায়োটিক ঔষুদ সেবন থেকে বিরত থাকা।
উচ্চ কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার বা ফ্যাট থেকে বিরত থাকা।
দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় তাজা ফলমূল, শাক-সবজি রাখা।
তাজা শাকসবজি |
পর্যাপ্ত পরিমানে বিশুদ্ধ পানি পান করা।
ধুমপান ও অ্যালকোহল সেবন থেকে বিরত থাকা।
পর্যাপ্ত শারীরিক ব্যায়াম করা।
ওজন কমানো।
লবন কম খাওয়া।
কিডনি রোগ স্পষ্ট হলে অভিজ্ঞ কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসার ব্যাবস্থা গ্রহন করা।
পরামর্শ নিতে কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সন্ধান করতে চাইলে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন-
ঢাকা শহরের জন্য- https://www.valodactar.com/2022/08/kidney-bisesoggo-dactar-dhaka.html
রাজসাহী শহরের জন্য-https://www.valodactar.com/2022/04/doctor-chember-rajshahi.html
খুলনা শহরের জন্য- https://www.valodactar.com/2022/09/Urologist-Khulna.html
কোন মন্তব্য নেই