Asthma ।। শ্বাসকষ্ট ।। হাঁপানি >www.valodactar.com
শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়ে যাওয়া ফুসফুসের শ্বাসনালির প্রদাহজনিত দীর্ঘস্থায়ী রোগকে সাধারণত Asthma,শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি বলা হয়ে থাকে। বিশ্বময় এ রোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে । সব বয়সেই এ রোগ দেখা যায় । তবে শিশু ও বৃদ্ধ বয়সে এবং গ্রাম থেকে শহর অঞ্চলে এবং শীত কালে এ রোগের প্রকোপ অনেক বেশী ।
Causes of Asthma ।। অ্যাজমা রোগের কারন:
অ্যাজমার প্রকৃত কারণ মানুষের কাছে এখনোও প্রায় অজানা। তবে গবেষকরা ধারণা করেন যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন-
বংশগত কারন যেমন- মা-বাবা , ভাই- বোনের , দাদা- দাদি, নানা - নানি ইত্যাদি রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের মধ্যে এ রোগের ইতিহাস আছে ।
পরিবেশগত কারন যেমন- পলিইথিলিন, ইটভাটা, কলকারখানা ও মোটর গাড়ীর বিষাক্ত ধোঁয়া , বিভিন্ন রকমের উড়ন্ত ধুলা-বালি,মাইট, ফুলের রেনু ,পশু-পাখির গা থেকে উড়ে আসা খুসকি, খুব ঠাণ্ডা বা গরম বাতাস ফুসফুসে বায়ু চলাচলের শ্বাসনালির দেওয়ালের সংস্পর্শে এলে অকুস্থলে হাই-পারসেনসিটিভিটি বা এলারজির কারনে ফুসফুসের ক্লোমনালী ও ক্লোম শাখার স্মুথ পেশীতে আক্ষেপ ও সংকুচন বা ব্রঙ্কোস্পাজম ঘটে । শ্বাসনালীর আস্তরণ ফুলে যায় । এই ব্রঙ্কোস্পাজমের ফলে ফুসফুসে বায়ু চলাচলের পথ অস্বাভাবিকভাবে সংকীর্ণ হয়ে আসে ।শ্বাসনালী এতটাই সংকীর্ণ হয়ে যায় যে প্রশ্বাস ও নি:শ্বাসে শ্বাসবায়ুর গতি অনেকটাই কমে যায়। উপরন্ত স্পাজমের কারনে নিঃসরিত অতিরিক্ত মিউকাস বায়ু চলাচল তথা অক্সিজেন- কার্বনডাইঅক্সাইডের বিনিময় রুদ্ধ করে ফেলে। তখন দেহে অক্সিজেনের অভাবে হাঁপানি শুরু হয়ে যায়।
কিছু কিছু খাদ্য সামগ্রী যেমন- চিংড়ি মাছ , পুঁটি মাছ , সামদ্রিক কিছু মাছ গরুর মাংস, বেগুন, বাদাম, সামদ্রিক মাছ , হাঁস ও গরুর মাংশ, পাকা কলা, দই- মিষ্টি ইত্যাদি ।
কিছু কিছু ঔষধ যেমন - এসপ্রিন, এনাজেসিক ও এন্টিবায়োটিক ইত্যাদি শরীরের ভিতরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে ফুসফুসে বিভিন্ন মাত্রার হাই-পারসেনসিটিভিটি রিয়াকশনে হাঁপানির সৃষ্টি করে ।
রোগ জীবানুর সংক্রমন যেমন বিভিন্ন প্রকারের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনে সর্দি, কাশি, জ্বর সহ অনেক সময় হাঁপানি শুরু হয়ে যায়।
শারীরিক পরিশ্রম যেমন- অতিরিক্ত ঠাণ্ডা - গরমে কায়িক পরিশ্রম করলে, খেলা-ধুলা, বা যেকোনো পেরেশানির কারনেও শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে।
মনস্তাত্ত্বিক বিশৃঙ্খলায় যেমন- বিভিধ দুশ্চিন্তা , পারিবারিক-সামাঝিক অশান্তি ও মানসিক চাপে পড়েও অ্যাজমার শিকার হয়।
সর্বোপরি বলা যায় স্থান-কাল-পাত্র ভেদে বিস্তীর্ণ বর্নালীর এলারজি বা হাই-পারসেনসিটিভিটির কারনেই ঐ একই প্রক্রিয়ায় ( ব্রঙ্কোস্পাজম ) অধিকাংশ অ্যাজমার আক্রমন ঘটে থাকে।
Asthma symptoms।।অ্যাজমার লক্ষনঃ
সাধারনভাবে যে লক্ষন গুলো দেখা যায় তা হলো -
ক) অ্যাজমা একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ যার মূল লক্ষণ হল শ্বাস কষ্ট ও সাঁসাঁ শব্দে নিঃশ্বাস ফেলা। শ্বাস নেওয়ার সময় বাঁশির মতো আওয়াজ হয়।
খ) রোগী শ্বাসকষ্টসহ শুকনো কাশি, বুকে কাশি জমে যাওয়া, শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে শোঁ শোঁ আওয়াজ হওয়া ইত্যাদি সমস্যায় ভুগতে থাকে।
গ) সাধারণত অ্যালার্জি জনিত প্রতিক্রিয়া, সর্দি, রাইনাইটিজ, চোখে জ্বালাপোড়া ভাব ও চোখ থেকে পানি পড়া, বুকে চাপ বোধ, হাঁচি, কাশি, দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস শেষে শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ থাকতে পারে।
ঘ) শ্বাস নেওয়ার সময় বাঁশির মতো আওয়াজ হয়। কাশির সাথে শ্লেষ্মা নির্গত হওয়া , শারীরিক কর্মকাণ্ড যেমন হাঁটলে বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
Asthama treatment।।অ্যাজমার চিকিৎসাঃ
শ্বাস কষ্টের চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য হলো - রুগীর রক্তের অক্সিজেন লেভেল স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরিয়ে আনা । এর জন্য তাৎক্ষনিকভাবে অক্সিজেন লেভেল জানা বিশেষ প্রয়োজন ।
তাৎক্ষনিকভাবে অক্সিজেন লেভেল জানার যন্ত্র অক্সিমিটার কিনতে এখানে ক্লিক করুন
অ্যাজমার কার্যকরী ওষুধ হলো ইনহেলার। এর মধ্যে কিছু ইনহেলার উপশমক যেমন- সালবিউটামল , লিভোসালবিউটামল ইত্যাদি । আবার কিছু ইনহেলার প্রতিরোধক যেমন- সালমেটারল+ফ্লটিকাসন ইত্যাদি ছাড়াও আরও গ্রুপের ইনহেলার ও ওষুধ আছে । যে সমস্থ ইনহেলার ও মুখে খাওয়ার অ্যাজমার ওষুধ রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ মতাবেক ব্যবহার করলে অ্যাজমার আক্রমনের তাৎক্ষনিক উপশের পাসাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে প্রতিরোধের মাধ্যমে সুস্থ থাকা সম্ভব।
রোগের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রঙ্কোডাইলেটরের পাশাপাশি স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করার প্রয়োজনও হতে পারে। শ্বাসকষ্টের কিছু ঘরোয়া চিকিৎসাও আছে। গরম পানিতে মেনথল দিয়ে ভাপ নিলে, তুলশি+পুদিনা +আদা চা খেলেও শ্বাসকষ্ট থেকে কিছুটা আরাম পাওয়া যায়। মনে রাখবেন শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগীদের নিয়ম মেনে চলাটা খুবই জরুরী ।
Asthma-শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগীরা কি কি নিয়ম মেনে চলবেন তা জানতে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এর বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আশিক ইমরান খান সাহেবের মুখ থেকে শুনতে ওনার ছবির ওপর অথবা > SEE MOREButton এ ক্লিক করুন
Asthma prevention।।অ্যাজমা প্রতিরোধে করনীয়ঃ
ক) সুসম পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করতে হবে, বিশেষ করে ভাত,রুটি , মাছ , মাংশ, ডিম ,দুধ, ডাল , রঙ্গিন শাক-সব্জি, ভিটামিন-এ জাতীয় খাবার, কলিজা, গাজরসহ শাক-সবজি ও মধু ইত্যাদি খেয়ে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে হবে।
খ) যে সব খাদ্য খেলে অ্যাজমা বাড়ে বলে মনে হয়, সেগুলো একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন- যাদের অ্যালার্জিজনিত শ্বাসকষ্ট আছে, তাদেরকে যতটা সম্ভব অ্যালার্জেন থেকে দূরে থাকতে হবে । গরুর মাংস, বেগুন, বাদাম, চিংড়ি মাছ ,পুঁটিমাছ, সামদ্রিক মাছ , হাঁস ও গরুর মাংশ, পাকা কলা, দই- মিষ্টি , ইত্যাদি খাবার খেলে যাদের শ্বাসকষ্ট বাড়ে, তাদের এসব খাবার খাওয়া যাবে না।
গ) ধূমপান, ধুয়া , যাবতীয় ধুলোবালি ও মাইট এড়িয়ে চলে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে হবে। বাইরে বেরোলে মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
ঘ) বালিশের ওয়াড়, কম্বল- লেপ-তোশক, চাদর , মাফলার, পরদা ১
সপ্তাহ পর পর কেচে পরিষ্কার করতে হবে । শোবার ঘর , সোফা , ম্যাট , ধুলোবালি ও মাইট মুক্ত রাখতে হবে। নিয়মিত মাফলার ব্যবহার করতে হব।
ঙ) বাড়িতে পোষা প্রাণী (ছাগল ,গরু, কুকুর, বিড়াল) থাকলে নিয়মিত গোসল করাতে হবে বা এদের থেকে দূরে থাকতে হবে।
চ) গায়ে শীত লাগানো যাবে না , ফ্রজেন পানি, দই মিষ্টি , আইস্ক্রিম না খেয়ে গরম গরম খাদ্য খেতে হবে। শীতে ঠাণ্ডা হাওয়া বা ফ্যানের বাতাস লাগানো যাবে না। গরম পানিতে অযু- গোসল সারতে হ
ছ) নিয়মিত চেকআপ ও ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক জীবন যাপন করতে হবে। এবং পরিশেষে বলা যায়-- শহরাঞ্চলের বায়ুদূষণ, যেটি শ্বাসকষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ, তা থেকে মুক্তি পেতে হলে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন। কলকারখানা রাখতে হবে শহর থেকে দূরে, ডিজেলচালিত গাড়ির সংখ্যা ও চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সমন্বয় ছাড়া এটি সম্ভব না। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আমাদের সবাইকে সচেতনতা ও কার্যকর উদ্যোগ অবলম্বন করতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই